প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অনুচ্ছেদঃ ৮ তারিখঃ ১৮-০৩-২০১৬
সম্পাদনায়ঃ মনি মুক্তা
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,১ম বর্ষ(২০১৫-১৬)ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়।
রাজধানী ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এর অবস্থান। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।আমরা আজকে তোমাদেরকে এই
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।
১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশবিদ্যালয়, তখন আমাদের এই
দেশ শাসন করত ব্রিটিশরা ।যুক্তরাজ্যের নাগরিক বা মানুষদেরকে ব্রিটিশ নামে অভিহিত
করা হয়।তখনো বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্থান নামে কোন দেশ ছিলনা।এই তিন দেশকে একত্রে
ভারত উপমহাদের বলা হত।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আমাদের বাংলাদেশের মানুষের ভাষা ছিল
বাংলা কিন্তু বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ছিল মুসলমান এবং পশ্চিমঙ্গের মানুষ ছিল হিন্দু।এই পশ্চিমবঙ্গ
ও আজকের বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রদেশ ছিল।
এত বড় প্রদেশের শাসন করা এক জন প্রশাসকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই ব্রিটিশ সরকার এই
প্রদেশকে দুই ভাগে ভাগ করল। একটি ভাগ পশ্চিমবঙ্গ ও অন্য ভাগ আমাদের এই বাংলাদেশ।
এই ঘটনাকে বলা হয় বঙ্গভঙ্গ। বাংলাকে ভাগ করার ফলে কলকাতার হিন্দুদের ক্ষতি হয়ে
যায়।ফলে ব্রিটিশদের বিরোদ্ধে হিন্দুরা আন্দোলন শুরু করে।বঙ্গভঙ্গের ফলে লাভবান হয়েছিল বাংলাদেশের মুসলমানরা। কিন্তু
হিন্দুদের আন্দোলনের ফলে বিটিশ সরকার ১৯১১
সালে দুই বাংলাকে এক্ত্রিত করে যাকে বঙ্গভঙ্গ রদ বলা হয় মানে বঙ্গভঙ্গ বাতিল।এই
ঘটনার ফলে মুসলমানরা কষ্ঠ পায় এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। মুসলমানদেরকে শান্ত করার জন্য ব্রিটিশ সরকার এই পূর্ববাংলায়
একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার
প্রতিশ্রুতি দেয়।সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।এই জন্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি রাজনৈতিক ফসল বলা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অবদানঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি তারা হচ্ছেন ঢাকার
নবাব স্যার সলিমুল্লাহ যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি দান করেছিলেন, শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক ,টাঙ্গাইল ধনবাড়ীর জমিদার
নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর অবাদানের কথা স্বরণীয় হয়ে থাকবে। তোমরা জেনে অবাক হবে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার সময় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বিরুদ্ধে কথা বলেছিল এবং হিন্দুরাও
এটাকে ভাল চোখে দেখেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবাদানঃ
এই অঞ্চলের মানুষকে শিক্ষিত করে সচেতন করার পেছনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনেক যা বলে শেষ করা যাবে না। বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা পাশ করে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলন সহ সকল অন্যায় অবিচারের বিরোদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রোখে দাড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে এই ধারা চলমান নেই। ‘বলা হয়ে থাকে একটি দেশ একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে কিন্তু বাংলাদেশটাকেই নির্মান করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে’। তোমরা বড় হয়ে বিস্তারিত জানবে এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে, অনেকে হয়তো ভর্তিও হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।দর্শণীয় স্থানঃ
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং এর আশে পাশে দেখার মত অনেক কিছু আছে। স্থাপত্য শৈলি নির্মাণ ও
সৌন্দর্যের দিক থেকে কার্জন হল, ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল অনন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভিতরেই আছে মোঘল আমলে নির্মিত ঢাকা গেট,
আছে তিন নেতার মাজার যেখানে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে পূর্ব বাংলার তিন বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা - হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী,খাজা নাজিমুদ্দিন ও শেরে
বাংলা এ.কে. ফজলুল হক ।তোমরা বড় হয়ে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানবে। ২১শে ফেব্রুয়ারিতে তোমরা টেলিভিশনে দেখ যে মানুষ খালি পায়ে শহিদ মিনারে
ফুল দেয় সেই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত। দোয়েল
চত্বর, জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ও জয়নুল আবেদিনের কবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
কেন্দ্রীয় মসজীদের পাশে অবস্থিত। আমরা জানি শেখ মুজিবর রহমান ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিল সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে দাঁড়িয়ে এই উদ্যানটিও ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা ঘেষে অবস্থিত। একুশে বইমেলা আগে অনুষ্ঠিত হত বাংলা একাডেমি
প্রাঙ্গনে, এই বাংলা একাডেমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই অবস্থিত।গত দুই বছর যাবত
একুশে বইমেলা বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যান প্রাঙ্গনে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এই
ক্যাম্পাসের পাশেই অবস্থিত।
![]() |
কার্জন হল |
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন